পুরো ভারতবর্ষ কার্যত জ্বলছে। হা জ্বলছে, পুড়ছে তীব্র দাবদাহে।বলতে গেলে এই মূহূর্তে সাউথ আফ্রিকা, সুদান, ওমান, সৌদি আরবের মতো অনেক দেশের থেকেও ভারতের তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ সহ ওড়িষ্যার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, পূর্ব উত্তর প্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। বলা হচ্ছে ২০২৪ এর গ্রীষ্মকাল সবথেকে উষ্ণতম বছর হতে চলেছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (Indian Meteorological Department) এর temperature sensor (একটি যন্ত্র যা তাপমাত্রা পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়) এর সতর্ক বার্তা অনুযায়ী ,গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ শে এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
১৯ শে এপ্রিল – ২১ শে এপ্রিল = উড়িষ্যা।
১৯ শে এপ্রিল- ২৩ শে এপ্রিল = গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ।
২০ শে এপ্রিল- ২৩ শে এপ্রিল = বিহার।
১৯ শে এপ্রিল- ২২ শে এপ্রিল = তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানা।
উক্ত অঞ্চল গুলোতে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলেছে।
২৪ শে এপ্রিল থেকে ৫ ই মে ২০২৪ পর্যন্ত ১২ দিন সময় সীমার মধ্যে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ধেয়ে আসতে চলেছে তীব্রতর প্রাণঘাতী তাপপ্রবাহ যেটাকে লাল তাপপ্রবাহ বলা হচ্ছে। এটি এতটাই ভয়াবহ ও তীব্র যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিতে পারে। ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে এই লাল তাপপ্রবাহ বলয় চক্র কে ভয়াবহ প্রাণঘাতী লাল তাপপ্রবাহ বলয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গ্লোবাল ফোরকাস্টিং সিস্টেম মডেল (GFS) প্রদত্ত সময় সীমার মধ্যে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তুলে ধরেছে ৪৭ʼ-৪৯ʼ পর্যন্ত। আইকন (ICON) মডেল অনুযায়ী দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তুলে ধরেছে ৪৫ʼ -৪৭ʼ এর আশেপাশে। ইউরোপীয় মিডিয়াম রেঞ্জ ফরকাস্টিং মডেল (ECMWF) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তুলে ৪৩ʼ-৪৫ʼ এর আশেপাশে। ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে প্রদত্ত সময় সীমার মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ৪৫ʼ-৪৭ʼ সেলসিয়াস পর্যন্ত। আসন্ন তাপপ্রবাহ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূর্যর এত তাপে ভারতবর্ষ আরও গরিব দেশে পরিণত হচ্ছে। কথাটা শুনতে অদ্ভুত ও হাস্যকর লাগলেও অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আজকের দিনে দেশের ৭৫% মানুষ শারীরিক পরিশ্রম করে দিন গুজরান করেন।চাষী, মজুর, মিস্ত্রি,ফেরিওয়ালা, ছোট ব্যবসায়ী সবাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোদে ঘুরে ঘর্মাক্ত অবস্থায় রোজগার করেন। এরকম অসংগঠিত সেক্টর এর উপরে নির্ভর করে দেশের ৫০% এর উপরের বেশি জনতা, এরাই আমাদের দেশের জিডিপির এক তৃতীয়াংশ যোগান দেন। কিন্তু এই গরমে তাদের শারীরিক ক্ষমতা কমে যায়, শরীরে অতিরিক্ত জলের যোগান না দেওয়া হলে জনশূন্যতা (dehydration) হয়ে থাকে, এনার্জির ঘাটতি হয়, ফলে তাদের দ্বারা প্রয়োজনীয় উৎপাদনে ঘাটতি হয় প্রায় ৫% থেকে ১০%। গরমে হাঁসফাঁস করে এই শ্রমজীবী মানুষেরা যদি কাজই করতে না পারেন তাহলে দেশ ও তো পিছিয়ে পড়বে। যারা অফিসে বা বাড়িতে কাজ করে তাদের শুধু বাইরে যাওয়া আসার সময়ই গরম বা তাপের সম্মুখীন হতে হয়। McKinsey এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের প্রায় কুড়ি কোটি মানুষ চরম তাপপ্রবাহে আক্রান্ত হতে পারেন, আর তার জন্য ২০৩০ পর্যন্ত দেশের জিডিপির ২.৫% থেকে ৪.৫% অব্দি ক্ষতি হতে পারে, যেটা হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রতি বছর প্রায় ১২৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে শাসক দলের উপর মহল থেকে নীচের মহল কারোর কোনও হেলদোল নেই। অথচ, জলবায়ু পরিবর্তন হলে যত দেশের উপর তার প্রভাব পড়বে ভারত সেই দিক দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
হা AC হলো এমন এক জিনিস যা গরম, অতিরিক্ত তাপ এসব শব্দ কে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয় না। কিন্তু AC দিয়ে গরম কে কমিয়ে ফেলা যায় না, বরং তা বেড়ে যায়। কারণ AC চলে ইলেকট্রিসিটিতে। আর আমাদের দেশে ইলেকট্রিসিটির যোগান দেয় থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট গুলো। এই প্ল্যান্ট গুলো তে কয়লা পুড়িয়ে তাপশক্তি উৎপাদন করা হয় যা থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মিশে পাল্লা দিয়ে দূষণ বাড়িয়ে চলে। বলা হচ্ছে, AC এর ব্যবহার ২০৫০ সালের মধ্যেই নয় গুণ বৃদ্ধি পাবে।
তাপপ্রবাহ একটি বিশেষ প্রাকৃতিক অবস্থা যেটা বিশেষ পরিস্থিতিতে তৈরি হয়। এটা গরম, ঠান্ডা, বর্ষার মতো কোনও মরশুম না, এটা একটা জরুরী অবস্থা। কোনও অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে উচ্চচাপ তৈরী হলে বায়ু প্রবাহিত হতে বাধা পেয়ে সেখানেই লকড হয়ে যায় আবার মাটি গরম হয়ে যখন তাপ নিঃসরণ করে তখন সেটাও মহাকাশের বায়ুমণ্ডলে ফেরত যেতে পারে না। আটক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটা প্রেশার কুকারের ভিতরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। একটা নির্দিষ্ট সীমার উপরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তাপপ্রবাহ জরুরী অবস্থা হিসেবে জারি করা হয়। IMD(Indian Meteorological Department) এর ঘোষণা অনুযায়ী-
১) সমভূমি অঞ্চল – মূল স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশী বা যদি ৪০ʼ ছাড়িয়ে যায়।
২) পার্বত্য অঞ্চল – মূল স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশী বা যদি ৩৫ʼ ছাড়িয়ে যায়।
৩) উপকূলীয় অঞ্চল – মূল স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশী বা যদি ৩৭ʼ ছাড়িয়ে যায়।
আচ্ছা অতিরিক্ত গরম কি দুঃখ ডেকে আনে ? আর অতিরিক্ত ঠান্ডা কি সুখ এর সন্ধান দেয় ? অন্তত চলতি বছরের ২০ শে মার্চের “International Day of Happiness Report “সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রথম দশটি সুখী দেশের তালিকায় ঠান্ডা প্রধান নরডিক দেশ গুলো অধিকার করে রয়েছে আর সেখানে ভারতের স্থান ১২৬ নম্বরে। ফিনল্যান্ড , আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড , ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া প্রমুখ দেশগুলো প্রবল ঠান্ডা থেকে বাঁচবার অনেক রকমের উপায় খুঁজে বের করেছে, কিন্তু আমাদের একশো কোটির উপরের জনসংখ্যার দেশ প্রবল গরম থেকে বাঁচতে কোনও সুরাহা বের করতে পারেনি। এর থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, মানুষের কর্ম ক্ষমতা ও ভালো থাকা দুটি বিষয়ই সে যেখানে থাকে তার তাপমাত্রার উপর অনেক টাই নির্ভরশীল ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
তাপমাত্রা কে চেকমেট দিতে গেলে প্রথমেই পাশ্চত্য ধ্যান ধারণার অন্ধ অনুকরণ করা বন্ধ করতে হবে। আসলে পাশ্চাত্ দেশগুলো থেকে যে সংস্কৃতি নেওয়ার মতো সেটা আমাদের দেশে গ্রাহ্য হয় না, কিন্তু যেটা নেওয়ার মতো নয়, সেটা গ্রাহ্য হয়। যেমন আমেরিকার বেশির ভাগ শহরে অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকা দেখতে পাওয়া যায় যেগুলোতে কাঁচ দিয়ে জানলা দরজা করা থাকে, বলা বাহুল্য কাঁচ দিয়ে ঢাকা থাকে। তাদের দেখাদেখি কাঁচের অট্টালিকা আর কর্পোরেট দুনিয়া সমার্থক হয়ে গেছে। মুম্বাই, কলকাতা সব জায়গায় কাঁচের সুদৃশ্য অফিস বাড়ি আপনি দেখতে পাবেন। কিন্তু যারা নির্মাণ করেছেন তারা একবার ও ভেবে দেখেননি, গ্রীষ্মকালে আমেরিকার গড় তাপমাত্রা থাকে ২৭’ সেলসিয়াস আর ভারতের বিভিন্ন শহরে সেটা পৌঁছায় ৩৫’ তে। তার মানে হলো ভারতের আবহাওয়া ও আমেরিকার আবহাওয়া পরস্পরের থেকে একেবারেই আলাদা। গ্রীষ্ম প্রধান ভারতের জলবায়ু গরম ও আদ্র। কাঁচের বাণিজ্যিক অট্টালিকা গুলোর কাঁচের উপর সূর্যের সরাসরি আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয় ও দ্বিগুণ তাপ নিঃসরণ করে। কিন্তু যদি সিঙ্গাপুরের দিকে তাকানো হয় তাহলে আমাদের দেশের সমস্যা কিছুটা সমাধান হতে পারে। সিঙ্গাপুরের গড় তাপমাত্রা আমাদের দেশের গড় তাপমাত্রার কাছাকাছি থাকে। কিন্তু ওখানকার ইমারত গুলো অন্য রকম দেখতে হয়। উঁচু ইমারত গুলো তে উল্লম্ব ভাবে তৈরী বাগান থাকে। খুব কম জায়গাকে যতদূর সম্ভব কাজে লাগিয়ে বাগান তৈরী করা হয়।
বড় বৃক্ষ জাতীয় গাছ যেমন আম, কাঁঠাল, পিপুল, বট, শাল, সেগুন, নারিকেল সারা জীবনে কয়েকশো টন অক্সিজেন এর যোগান দেয় বিনামূল্যে, বদলে কয়েকশো টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাস থেকে গ্রহণ করে। আসলে দিনের শেষে দোষটা আমাদের। প্রকৃতি থেকে আমরা যা যা নিয়ে থাকি , তার এক শতাংশও দায়িত্ব নিয়ে ফেরত দিই না। বেদ উপনিষদে বলা আছে আমরা প্রকৃতির জীবিত ও জড় পদার্থ যা যা ব্যবহার করি , সবটাই ঈশ্বরের দান। আমরা এগুলোর মালিক বা মালকিন না, তাই প্রকৃতির দান নিয়ে তা দায়িত্ব সহকারে ফেরত দিতে হবে। শুধু ছোট বাহারি ফুল, ক্যাকটাস গাছ নয়, বড় বৃক্ষ জাতীয় গাছ যত বেশি সম্ভব রোপণ করতে হবে। এটাই এই ভয়াবহ বিপদ থেকে বাঁচবার একমাত্র উপায় ।
Read also: লাদাখ: এক পাহাড়ি প্রতিবাদ
When it comes to landscaping in Mountain View, choosing the right plants can make all…
Hey there! Ready to dive into the exciting world of online betting with One X…
When it comes to asphalt paving, technology is paving the way—literally! Whether you're in South…
Before we get into the benefits, let's clear up what construction labor contractors do. These…
Before you jump into finding the right repair service, it's essential to understand what kind…
Hello, Walnut Creek residents! If you're contemplating some asphalt paving projects for your home or…